Wednesday 2 September 2015

নারীর সমান অধিকার ও আমাদের সংবিধান

নারীর সমান অধিকার ও আমাদের সংবিধান 


'বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।' আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম নারীকে এভাবে চিহ্নিত ও সন্মানিত করেছেন। নারীর ভূমিকা সমাজ-সভ্যতার অগ্রযাত্রার ইতিহাসে সমান্তরাল।

আমাদের সংবিধানও নারীকে মর্যাদা দিয়ে তাদের অধিকারটি সুরক্ষিত করেছে। সংবিধানের মৌলিক অধিকার অংশে অনুচ্ছেদ ২৮ এর দফা ২ এ বলা আছে,  ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবে।’ এই অনুচ্ছেদে উল্লেখিত রাষ্ট্র বলতে বুঝানো হয়েছে, সংসদ, সরকার, ও সংবিধিবদ্ধ সরকারি কোন প্রতিষ্ঠান (সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী )।

নারী এবং পুরুষের মাঝে সমকক্ষতার প্রশ্নটিকে পরিস্কার করে দিয়েছেন সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ। এই ঘোষণা আরো স্পষ্ট করেছে যে, মানব জীবন সার্থকতার জন্য নারী ও পুরুষের সমান চাহিদা বিদ্যমান।   

নারীর সমঅধিকারের বিষয়টিতে রয়েছে নারীপুরুষের মিলিত বিশ্বে সর্বজনীন প্রগতির প্রতিশ্রুতি। আমাদের সমাজে নারী পুরুষ সমতা অর্জনের পথে পশ্চাদমুখী দৃষ্টিভঙ্গি এক বিরাট বাধা। তারপরও দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সমান, কখনো বা তারও বেশি মেধার পরিচয় দিচ্ছেন। স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রে নারীর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। লিঙ্গসমতা সূচকে এ দেশের নারীদের অবস্থান এখন পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নারীদের তুলনায় উন্নত হয়েছে। কিন্তু অধিকারের ক্ষেত্রে সমতা আসেনি। চাকরিক্ষেত্রে নারী সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত; নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীদের মধ্যে নারী পুরুষের চেয়ে কম মজুরি পান। নারীরা পুরুষের সমান মেধার পরিচয় দিলেও উচ্চশিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে তাঁরা এখনো পুরুষের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছেন।

অথচ, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮ এর দফা ১ এ বলা হয়েছে, ‘নারী-পুরুষভেদে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।’ বৈষম্য বলতে বিভিন্ন আচরণ বুঝায়। কিছু দেবার বা নেবার বেলায় একজনের সঙ্গে এক রকম আর অন্যজনের সঙ্গে আরেক রকম, এটাই হচ্ছে বৈষম্য।

যদিও নারীর নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে দেশে আইনি সুরক্ষা মজবুত করা হয়েছে, তারপরও ধর্ষণ, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপসহ নানা রকমের সহিংসতা দমনে রাষ্ট্র ও সমাজের ব্যর্থতা ঘোচেনি, বরং ক্ষেত্রবিশেষে তা প্রকট হয়েছে। পথে-ঘাটে তো বটেই; ঘরের ভেতরেও নারীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতা দূর হচ্ছে না। নারীর কর্মক্ষেত্র এখনো নিরাপদ হয়ে উঠেনি এবং নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন নিয়মিত।

তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা ও উপ-নেতা এবং বিরোধীদলীয় নেতা নারী- এ তথ্যটিও বিশ্বে আমাদের দেশকে নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা দিয়েছে। তবে ক্ষমতায়ন হতে হবে সর্বত্র এবং এ ক্ষেত্রে শিক্ষাই হতে পারে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। কারণ শিক্ষায় ভর করে একজন নারী নিজের পায়ে দাঁড়ায়। পারিবারিক, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় বৈষম্য ও পুরুষতান্ত্রিক কুসংস্কারকে অস্বীকার করারও শক্তি জোগায় শিক্ষা।

সকল বৈষম্য দূরে ঠেলে নারী-পুরুষের মিলিত প্রয়াসে দেশে আসবে সর্বজনীন প্রগতি- সে প্রতিক্ষাই আছি।

প্রযুক্তিগত বোকামি ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত

  ইন্টারনেট ১৯৬৯ সালে আবিস্কৃত হয়। গত ১৯৯৫ সালে ইন্টারনেট বাণিজ্যিক বা কর্পোরেট পন্য হিসেবে আবির্ভূত হয়ে চলমান রয়েছে। গত ১৯৯০ দশকে টেলিফো...