জমি বা স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত সমস্যা সমাজে খুবই সাধারণ একটা বিষয়। জমি বা স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে কিন্তু এর জন্য কোন ভোগান্তিতে পড়েনি এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। প্রতিনিয়ত জমি বিক্রয় বা ক্রয় করতে গেলে আমরা বিভিন্ন ধরণের প্রতারণা বা ভোগান্তির শিকার হয়ে থাকি। জমি ক্রয় করে অনেক সময় দেখা যায় যে বিক্রেতা পূর্বেও ঐ একই জমি একাধিক জনের নিকট প্রতারণামূলক ভাবে বিক্রয় করেছে। নিজের সব জমানো টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করে এ ধরণের প্রতারনার শিকার হলে মানুষ সাধারণত অসহায় হয়ে পড়ে। সঠিক আইনী ব্যবস্থা গ্ৰহনের মাধ্যম না জানা থাকায় আইনি প্রতিকার করতে অক্ষম হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরণের প্রতারনার শিকার হলে তার আইনী বিধান কি হতে পারে সেটাই তুলে ধরেছেন ল’ইয়ারস ক্লাব ডট কমে বিজিডিসিএল এর সহকারী ব্যবস্থাপক (আইন) মোঃ কামাল হোসেন।
দেওয়ানী প্রতিকার:-
একই জমি একাধিক জনের নিকট হস্তান্তর করা হলে উক্ত জমিতে কে অগ্ৰাধিকার বা মালিকানা লাভ করবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন-১৮৮২ এর ধারা ৪৮ এ
উক্ত ধারা অনুযায়ী, হস্তান্তর দ্বারা সৃষ্ট অধিকারের অগ্রাধিকার:-
যেক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি বিভিন্ন সময়
হস্তান্তর দ্বারা একই স্থাবর সম্পত্তির উপর একাধিক অধিকার সৃষ্টির ইচ্ছা পোষণ করে এবং এরূপ অধিকারগুলি যদি এক সঙ্গে অবস্থান বা পরিপূর্ণ ভাবে বলবৎ করতে না পারে সেক্ষেত্রে পূর্ববর্তী হস্তান্তর গ্রহণকারীগণের উপর বাধ্যতামূলক কোন বিশেষ চুক্তির বা বাধার অবর্তমানে পরে সৃষ্ট প্রত্যেক অধিকার পূর্বে সৃষ্ট অধিকারগুলির সাপেক্ষে হতে হবে।
অগ্ৰাধিকার নীতি :-
অগ্রাধিকার নীতির অর্থ হল, সময়ের দিক হতে যিনি প্রথম হবেন, আইনের দিক হতে তিনি অধিকার লাভ করবেন। কোন সম্পত্তির আইনসঙ্গত মালিক যদি একই সম্পত্তি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করে তাহলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা নিরসন করার জন্য এই ধারায় বিধান করা হয়েছে। আমাদের দেশে একই সম্পত্তি বার বার হস্তান্তর করতে দেখা যায়। এই
অবস্থায় যিনি প্রথম হস্তান্তর গ্রহণ করবেন তিনি সম্পত্তিটি পাবেন। তবে হস্তান্তরসমূহ এমন প্রকৃতির হতে হবে যাতে ঐ হস্তান্তরগুলি একত্রে কার্যকর হতে পারে। প্রথম হস্তান্তর আইনানুগ বৈধ না হলে ৪৮ ধারা অনুসারে পরবর্তী হস্তান্তবের উপর তা প্রাধান্য পাবে না।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৪৮ ধারা অগ্রাধিকার নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এই নীতির অর্থ হল, সময়ে যিনি অগ্রবর্তী আইনে তিনি উৎকৃষ্ট, অর্থাৎ সময়ের দিক হতে যিনি প্রথম হবেন আইনের দিক থেকে তিনি সুবিধা পাবেন I
এই নীতির উপর ভিত্তি করে ৪৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, যখন কোন ব্যক্তি ভিন্ন
ভিন্ন সময়ে হস্তান্তর দ্বারা একই স্থাবর সম্পত্তির উপর একাধিক অধিকার সৃষ্ট করে
এবং ঐরূপে সৃষ্ট অধিকারগুলি যদি একত্র একই সময় কার্যকর, পূর্ণভাবে কার্যকর হতে
না পারে তাহলে পূর্বে সৃষ্ট অধিকার পরের সৃষ্ট অধিকারগুলির উপর প্রাধান্য পাবে।
তবে পূর্ববর্তী হস্তান্তর গ্রহীতার উপর বাধ্যকর কোন বিশেষ চুক্তি থাকলে এই ধারা
অনুসারে প্রথম হস্তান্তরগ্রহীতা পরবর্তী হস্তান্তর গ্রহীতাদের উপর প্রাধান্য পাবে না।
যিনি সম্পত্তি আগে কিনবেন তিনি সম্পত্তি লাভ করবেন। কোন বিক্রেতা যাতে
প্রথম ক্রেতাকে প্রতারিত করে সম্পত্তি পুনরায় বিক্রয় না করতে পারে তার জন্য ৪৮
ধারায় বিধান করা হয়েছে। কোন সম্পত্তির মালিক সম্পত্তি একবার বিক্রয় করলে ঐ সম্পত্তিতে বিক্রেতার বিক্রয়যোগ্য আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। বিক্রতা একবার বিক্রয়ের মাধ্যমে সকল অধিকার হারায়। যার যাতে কিছু নেই সে তা বিক্রয় করলে ক্রেতা কিছুই পাবে না, কারণ আইনে প্রবাদ রয়েছে, যার যে স্বত্ব আছে তার চেয়ে উত্তম স্বত্ব সে অন্যকে দিতে পারে না ।
উদাহরণ-
করিম তার দৌলতপুর মৌজার ১২৬৭নং দাগের জমি বিগত ১৬-০৬-২০১৮ ইং তারিখে আরিফের নিকট বিক্রয় করলে। ১৮-০৯-২০১৯ ইং তারিখে তা
আবার রাজ্জাকের নিকট বিক্রয় করলো। ৪৮ ধারা অনুসারে ১৬-০৬-
২০১৮ ইং তারিখে আরিফের নিকট হস্তান্তর ১৮-০৯-২০১৯ ইং তারিখে রাজ্জাকের
নিকট হস্তান্তরের উপর প্রাধান্য পাবে, অর্থাৎ আরিফের নিকট বিক্রয় কার্যকর হবে।
অগ্রাধিকার নীতি প্রয়োগের পূর্বশর্তসমূহঃ
অগ্রাধিকার নীতি প্রয়োগের জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। শর্তসমূহ হলো:-
১। একই সম্পত্তির উপর হস্তান্তরের মাধ্যমে অধিকারসমূহ সৃষ্টি করতে হবে।২। হস্তান্তরগুলি ভিন্ন ভিন্ন তারিখে হতে হবে। একই সঙ্গে একই দলিলে হলে চলবে না।
৩। হস্তান্তর আইনগত ভাবে বৈধ ও পরিপূর্ণ হতে হবে।
৪।হস্তান্তরগুলি পরস্পরের সাথে সংঘাতময় হতে হবে।
৫। বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন করা না হলে তা পরবর্তী রেজিস্ট্রেশন দলিলের
উপর প্রাধান্য পাবে না।৬। বিপরীত মর্মে কোন চুক্তি থাকলে অগ্রাধিকারের বিধান কার্যকর নয়।
৭। হস্তান্তরিত সম্পত্তিটি স্থাবর সম্পত্তি হবে।
উপরিউক্ত শর্তসমূহ পূরণ হলেই কেবল অগ্ৰাধিকারের নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
ফৌজদারি আইনে প্রতিকার:-
আপনি যদি জমি কিনে এই ধরনের প্রতারণার শিকার হন তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করতে পারেন।