Tuesday 15 June 2021

অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারিত হলে আছে আইনি প্রতিকার

 বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ই-কমার্স প্রোটোকলের জন্য বাংলাদেশের অনলাইন কেনাকাটা অনেক সহজ হয়েছে এবং এখন বাংলাদেশে অনলাইন কেনাকাটা অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ সাল থেকে এর প্রতি জনগন অনেক বেশী নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। কারণ অনলাইনে কেনাকাটায় ঘরের বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না তাই মানুষের সাথে মেলামেশা করা বা ভিড় এড়িয়ে চলা সম্ভব হচ্ছে এতে করে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকছে না।

বর্তমানে বেশীরভাগ জনগণের হাতে এখন স্মার্ট ফোন থাকার কারনে অনলাইনে কেনাকাটার হার বেড়েছে। প্রতিদিনের মুদি সামগ্রী থেকে শুরু করে কাপড়ইলেক্টনিকস, রান্নাঘরের সরঞ্জামাদি, কাপড়প্রসাধনীআসবাবপণ্যবইইলেকট্রনিক পণ্যগয়না এমনকি মোটর গাড়িও এখন অন-লাইনে বিক্রি হচ্ছে কিন্ত অনলাইনে কেনাকাটা করে আমরা যেমন সুবিধা পাচ্ছি তেমনি এর অসুবিধাও কম নয়। কষ্টের অর্জিত টাকা দিয়ে যখন মনের মতন পণ্য না পাই তখন মানসিকভাবে আমরা কষ্ট পাই আর সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিই। আমি নিজেও এর ভুক্তভোগি হয়েছি এবং আমার পরিচিত অনেকের কাছে এই ধরনের কথা শুনেছি যে তারা এইভাবে অনলাইনে কেনাকাটা করে বিভিন্ন ধরনের  প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অনলাইনে পণ্যের গুণগত মান   সম্পর্কে আমরা যাচাই বাছাই করতে পারি না বা এর সুযোগ কম থাকে আর যার কারনে ক্রেতারা প্রতারণার শিকার হয়।

আমরা অনেকেই হয়ত জানি না আমরা যদি অনলাইনে কেনাকাটা করে বা অনলাইন ছাড়াও কেনাকাটা করে প্রতারনার শিকার হই, তবে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে পারি। আমাদের সকলের এই আইন সম্পর্কে জানা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই আমাদের জানা প্রয়োজন যে আইনের চোখে বিক্রেতার বা পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কোন কোন কার্যক্রম অপরাধ হিসেবে গন্য হবে।‘

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী অপরাধগুলো হল: ১) পণ্যের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য যদি না লেখা থাকে। (২) পণ্যের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ না থাকাও অপরাধ। (৩) ভেজাল পণ্য ও ওষুধ বিক্রি করা। (৪) ফরমালিনসহ ক্ষতিকর দ্রব্য মিশিয়ে খাদ্যপণ্য বিক্রি করা। (৫) ওজনে কম দেওয়া। (৬) রেস্তোরাঁয় বাসি-পচা খাবার পরিবেশন করা অপরাধ। (৭)  মিথ্যা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতারণা করা । (৮) ক্রেতাদের পণ্যের গুণগত মানএকটি বলে অন্যটি দেয়াদামী ব্যান্ডের কথা বলে নকল দেওয়া। (৯) ধারণার আরেকটি চটকদার মাধ্যম হলো পণ্যের অভিহিত মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে সেই পণ্যে মূল্যছাড়ের ব্যাপকভিত্তিক প্রচারনা করা।

এছাড়া পরিবহনটেলিযোগাযোগপানি সরবরাহপয়ঃনিষ্কাশনজ্বালানিগ্যাসবিদ্যুৎনির্মাণআবাসিক হোটেলরেস্তোরাঁ ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোনো কাজ করাও অপরাধ।

উপরোক্ত অপরাধ যদি কেউ করে থাকে তবে সে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারবে। পন্য কিনে আমরা প্রতারিত হলে কোন কোন উপায়ে আইনি প্রতীকার পেতে পারি তা নিন্মরূপ- (১) দেওয়ানি আদালতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করতে পারি। (২) প্রতারণার অভিযোগে ফৌজদারি আদালতে মামলা করতে পারবেন। (৩) এছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করা যাবে। (৪) ১৮৭২ সালের কনট্রাক্ট আইনে প্রতিকার মিলবে। (৫) এ ছাড়া দ্য সেল অব গুডস অ্যাক্ট রয়েছে।

দেওয়ানি আদালতে কি ধরনের প্রতিকার পেতে পারি:

অনলাইনে প্রতারণার শিকার হলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সাইট এবং কী ধরনের প্রতারণার শিকার হলেন তা সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে সেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়েও দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন।

আদালত আপনার অভিযোগ যাচাই-বাচাই করবেন  এবং অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দিবেন। যদি আদালতে আপনার অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয় তাহলে আদালত অর্থদণ্ড বা কারাদণ্ড দিতে পারেন অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে।

প্রতারণার অভিযোগে মামলা করতে পারবেন ফৌজদারি আদালত:

কেউ কারো সাথে প্রতারণা বা Cheating করলে সেই ব্যক্তি অত্র প্রতারণাকারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতে ৪২০ বা 420  ধারায় মামলা দায়ের করতে পারবে। কারণ প্রতারণা তা হতে পারে যেকোন ধরণের। পণ্য কেনা বা হাতে পাওয়ার পর সেটার রশিদ বা ক্যাশমেমো দিয়ে জেলা জজ আদালতে অথবা মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলা করতে হবে। আদালত আপনার অভিযোগ যাচাই-বাচাই করবেন এবং  অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দিবেন যদি আদালতে  অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয় তাহলে আদালত অর্থদণ্ড বা কারাদণ্ড দিতে পারেন অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে ।

সহজ সমধান হিসেবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করবেন যেভাবে:

অনলাইনে প্রতারিত হলে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করাটা সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ। অনলাইনে পণ্য ক্রয়ের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে হবে। অত্র অভিযোগের পরিপ্রেজ্ঞিতে দুই পক্ষ থেকে শুনানি শেষে অধিদপ্তর ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পেলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা প্রদানের আদেশ দিবেন। এই আদেশের ফলে জরিমানা হিসেবে যে টাকা আদায় করা হবে তার ২৫ শতাংশ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাকে দেওয়া হবে।

প্রতারণার আরেকটি প্রলোভনমূলক মাধ্যম হলো পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে সেই পণ্যে মূল্যছাড়ের ব্যাপকভিত্তিক প্রচারণা করা হয়। যার ফলে ক্রেতারা অধিক হারে সেদিকে ঝুঁকে ৫০ ভাগ ছাড়ে কিনে নিজেকে মনে করে যে আমি জিতেছি কিন্তু আসল বিষয় এমন নয় বেশীরভাগ ঘেত্রেই দেখা যায় পণ্যের যে দাম আছে তার চাইতে অনেক বেশী দাম লেখা থাকে। এগুলো মূলত ক্রেতাকে ঠকানোর একটি চটকদার কৌশল। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯–এর ৪৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘কোন ব্যক্তি কোন পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতাসাধারণকে প্রতারিত করলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

অভিযোগ অবশ্যই লিখিত হতে হবে। লিখিত অভিযোগটি ভোক্তা অধিকারের কার্যালয়ে গিয়ে ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েব সাইট, ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে করা যায়। অভিযোগের সাথে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রশিদ সংযুক্ত করে দিতে হবে। অভিযোগকারীকে তার পূর্ণাঙ্গ নাম, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইল নম্বর (যদি থাকে) এবং পেশা উল্লেখ করতে হবে।

ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও রংপুরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের বরাবরে অভিযোগ করা যাবে। এছাড়া, দেশের সব জেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর অভিযোগ করা যাবে।

আইন লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ ৩ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানাসহ অবৈধ পণ্য ও অবৈধ পণ্য উৎপাদনের উপকরণ বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে।

চুক্তি আইনেও আছে প্রতিকার:

Contract Act 1872 অনুযায়ী চুক্তি হতে হয় দুজনের মধ্যে  আর যখন কোন পন্য ক্রেতা কিনতে চায় এবং বিক্রেতা তা বিক্রি করতে চায় তখনি দুজনের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়ে যায়। পণ্য নির্দিষ্ট সময় পরে বা কোন শর্ত সাপেক্ষে পণ্যের মালিকানা হস্তান্তর করার চুক্তিকে পণ্য বিক্রয় চুক্তি বলে। চুক্তি আইনের ষষ্ঠ অধ্যায়ে চুক্তি ভঙ্গ করার পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে। চুক্তিভঙ্গ করার জন্য ক্ষতি বা লোকসান ও চুক্তিবলে সৃষ্ট বাধ্যবাধকতা প্রতিপালনে ব্যর্থতার জন্য ক্ষতিপূরণ এবং ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির অধিকার রয়েছে। দায়িত্ব ভঙ্গ করলে দেওয়ানী অন্যায় সংঘটিত হয়। চুক্তি ভঙ্গ দেওয়ানী প্রকৃতির অন্যায়, ফৌজদারি অপরাধ নয়। এর প্রতিকার শাস্তি নয়, আর্থিক ক্ষতিপূরণ বা চুক্তি পালন।

সুতরাং আইন যতই থাক না কেন নিজের সচেতনাই পারে নিজেকে প্রতারিতের হাত থেকে রক্ষা করতে। চুক্তি আইনে ‘ক্যাভিয়াট এম্পটর’ নামে একটি মতবাদ আছে। অর্থাৎ ক্রেতা সাবধান নীতি। ক্রেতা যাতে প্রতারিত না হয়, সেদিকে তাকে নিজেই লক্ষ রাখতে হবে। অতএব নিজে সাবধান হন প্রতারণা থেকে রক্ষা পাবেন।

প্রযুক্তিগত বোকামি ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত

  ইন্টারনেট ১৯৬৯ সালে আবিস্কৃত হয়। গত ১৯৯৫ সালে ইন্টারনেট বাণিজ্যিক বা কর্পোরেট পন্য হিসেবে আবির্ভূত হয়ে চলমান রয়েছে। গত ১৯৯০ দশকে টেলিফো...