Wednesday, 2 September 2015

নাগরিকের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার

নাগরিকের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার 

দেশের প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার আছে। এই অধিকার নাগরিকের মৌলিক অধিকার। আর মৌলিক অধিকার হচ্ছে নাগরিকের সেই অধিকার যা কিনা রাষ্ট্র সুরক্ষা দিতে বাধ্য। কোন নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব হলে সেক্ষেত্রে যথাযথ আদালতের মাধ্যমে তার প্রয়োগ হতে পারে। সংবিধানে হাইকোর্টের ওপর এ দায়িত্ব ন্যাস্ত করা আছে। উচ্চ আদালতে কোন নাগরিক রিট করে তার অধিকার ভঙ্গ হলে তা প্রয়োগের জন্য আবেদন করতে পারে।

সচেতন মানুষ অনেকেই এই কথাগুলো জানে। কিন্তু এই স্বাধীনতা পূর্ণ ভোগ করা যাবে নাকি এতে কোন সীমাবদ্ধতা আছে তা জানেনা। অধিকার প্রশ্নে বাঙালি বরাবরই সোচ্চার; তা শুধু এখন নয় আদিকাল থেকে। আর অধিকার আদায় করতে পারে বলেই আমরা একটি সতন্ত্র ভাষা এবং স্বাধীন ভূখণ্ড অর্জনের মাধ্যমে একটি সংবিধান পেয়েছি।  

সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার অংশে ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক-স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হয়েছে। অনুচ্ছেদটিতে বলা হয়েছে,’ ‘ ‘(১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল। (২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে আদালত- অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব-প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং (খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার, নিশ্চয়তা দান করা হইল।’
 
তাহলে অনুচ্ছেদটি পাঠে বুঝা গেলো নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশ বা মত প্রকাশে পূর্ণ স্বাধীনতা নেই। এখানে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে মত প্রকাশের ফলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে আদালত- অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে করা আইনে আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা নিষেধ মেনেই কেবল মত প্রকাশ করা যাবে।

পাঠকের মনের নানাবিধ প্রশ্নের সমাধানে এখানে এই কথা উল্লেখ করা দরকার, মৌলিক অধিকার কোন সময় নিরঙ্কুশ নয়, সবসময় কিছু শর্তের অধীন হয়ে থাকে। অবাধ ভোগের নিশ্চয়তা দিলে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কল্যাণ রাষ্ট্রে কোন ব্যক্তির অবাধ বা নিরঙ্কুশ অধিকার থাকে না। কারন কল্যাণ রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হলো জনকল্যাণ, আর তাই জনস্বার্থকে ব্যক্তিস্বার্থের উপরে স্থান দেয়া হয়। সুতরাং সংবিধানে ঘোষিত মৌলিক অধিকারগুলোর উপর যুক্তিসঙ্গত বাধা নিষেধ আরোপ করা যায়।

আইনে একটি শব্দ আছে নজির বা দৃষ্টান্ত; ইংরেজিতে যাকে বলে Precedent। একই ধরনের মামলার ঘটনায় উচ্চ আদালতের মীমাংসিত কোন ঘটনার রায়কে নজির হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করে মীমাংসিত মামলার একই রায় প্রত্যাশা করা। এমন মামলার নজির যে শুধু নিজের দেশের হতে হবে তা নয়, পার্শ্ববর্তী দেশসহ অন্য কোন দেশকে টেনে আনা যায়। কথাটি একারণে বলছি মত প্রকাশের স্বাধীনতা অনুচ্ছেদটি আরো ব্যাখ্যা করার স্বার্থে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের কিছু মামলার রায়ের নজির টানছি।

“কিন্তু যেখানে কবি শ্রমিক শ্রমিকদের লক্ষ্য করিয়া বলিতেছেন যে’ ‘শ্রমিকগণ, বিপ্লবের বানী তোল। তোমাকে শোষণ করা হইয়াছে, পূর্ণভাবেই এখন ধ্বংস করিতে হইবে এবং তৎপর নতুন পৃথিবী আসিবে।’ এই উক্তিসমূহ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রতিকূলে, সুতরাং কবি শাস্তির যোগ্য।” [ এ ১৯৪১ পাটনা ১৩২]

‘’ ‘জনশৃঙ্খলা বলতে জন নিরাপত্তাও বুঝায়।‘’’’ [১৯৫০ এস সি আর ৫৯৪]

‘মানহানিকর উক্তি দণ্ডবিধি আইনে ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারায় অপরাধ। বাকস্বাধীনতার মৌলিক অধিকার মানহানিকর উক্তিকারীকে রক্ষা করে না।’’
[এ আই আর ১৯৫১ কলিকাতা ১৭৬

যদি কোন নাগরিক রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে আদালত- অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ ছাড়া কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তার মত প্রকাশে বাধার সম্মুখীন হন সেক্ষেত্রে তিনি আদালতে শরণাপন্ন হতে পারেন। কারন রাষ্ট্র সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলোর স্বীকৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তার সাথে সাথে সেই অধিকার কার্যকর করার দায়িত্বও গ্রহণ করেছে। সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা আছে, (অনুচ্ছেদ- ১০২ এর ১) “কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে এই সংবিধানের তৃতীয় ভাগের দ্বারা অর্পিত অধিকারসমূহের যে কোনো একটি বলবৎ করিবার জন্য প্রজাতন্ত্রের বিষয়াবলীর সহিত সম্পর্কিত কোনো দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিসহ যে কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্ট বিভাগ উপযুক্ত নির্দেশাবলী বা আদেশাবলী দান করিতে পারিবেন।”




পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে আছে আইন

পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে আছে আইন 

আইন অনুযায়ী পর্নোগ্রাফি বলতে বোঝায়, যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোন অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যাহা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোন উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যার কোন শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই; যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল বই, সাময়িকী, ভাস্কর্য, কল্পমূর্তি, মূর্তি, কাটুর্ন বা লিফলেট; বর্ণিত বিষয়াদির নেগেটিভ ও সফট বার্সন।
 
আইনে পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ, বহন, সরবরাহ, ক্রয়, বিক্রয়, ধারণ বা প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তল্লাশি এবং জব্দ করার অধিকার
পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর এর নিচে নন এমন কর্মকর্তা অথবা সরকারের নিকট হতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোন উপযুক্ত ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ ফৌজদারী কার্যবিধিতে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে অপরাধের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক গ্রেফতারের ক্ষেত্রে বা কোন পর্নোগ্রাফি সরঞ্জাম উদ্ধার বা জব্দের ক্ষেত্রে তল্লাশী কার্য পরিচালনা করতে পারবেন।

তল্লাশীকালে জব্দকৃত সফ্ট কপি, রূপান্তরিত হার্ড কপি, সিডি, ভিসিডি, ডিভিডি, কম্পিউটার বা অন্য কোন ডিভাইস বা এক্সেসরিজ, মোবাইল ফোন বা উহার যন্ত্রাংশ, অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত অন্য কোন যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ বা সরঞ্জাম, ইলেক্ট্রনিক উপায়ে ধারণকৃত কোন তথ্য বা মেমোরি, ইত্যাদি আদালতে সাক্ষ্য হিসাবে ব্যবহার করা যাবে।

এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধ তদন্তকালে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন বা অন্য কোন সরকারি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, মোবাইল অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, বৈধ ভিওআইপি সার্ভিস প্রোভাইডারসহ সরকারি বা সরকারের নিকট হতে লাইসেন্স বা অনুমোদনপ্রাপ্ত অন্য কোন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট স্বাভাবিক কার্য প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে সংরক্ষিত তথ্য অথবা তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সংগৃহীত কোন বিশেষ তথ্য আদালতে সাক্ষ্য হিসাবে ব্যবহার করা যাবে।

পর্নোগ্রাফির শাস্তি কি  
কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি উৎপাদন করলে বা উৎপাদন করার জন্য অংশগ্রহণকারী সংগ্রহ করে চুক্তিপত্র করলে অথবা কোন নারী, পুরুষ বা শিশুকে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করলে অথবা কোন নারী, পুরুষ বা শিশুকে কোন প্রলোভনে অংশগ্রহণ করিয়ে তার জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে স্থির চিত্র, ভিডিও চিত্র বা চলচ্চিত্র ধারণ করে তিনি অপরাধ করেছেন বলে মনে করা হবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৭ (সাত) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে অন্য কোন ব্যক্তির সামাজিক বা ব্যক্তি মর্যাদা হানি করলে বা ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় বা অন্য কোন সুবিধা আদায় বা কোন ব্যক্তির জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে ধারণকৃত কোন পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তিকে মানসিক নির্যাতন করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
কোন ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোন বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করিলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে মনে করা হবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের মাধ্যমে গণউপদ্রব সৃষ্টি করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি বিক্রয়, ভাড়া, বিতরণ, সরবরাহ, প্রকাশ্যে প্রদর্শন বা যে কোন প্রকারে প্রচার করলে অথবা উক্ত সকল বা যে কোন উদ্দেশ্যে প্রস্ত্তত, উৎপাদন, পরিবহন বা সংরক্ষণ করলে; অথবা কোন পর্নোগ্রাফি প্রাপ্তি স্থান সম্পর্কে কোন প্রকারের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোন ব্যক্তি কোন শিশুকে ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, বিতরণ, মুদ্রণ ও প্রকাশনা অথবা শিশু পর্নোগ্রাফি বিক্রয়, সরবরাহ বা প্রদর্শন অথবা কোন শিশু পর্নোগ্রাফি বিজ্ঞাপন প্রচার করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ১০ (দশ) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫,০০,০০০ (পাঁচ লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের সহিত প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বা সহায়তাকারী ব্যক্তি প্রত্যেকেই একই দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কতিপয় ক্ষেত্রে অপ্রযোজ্যতা

ধর্মীয় উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত বা ব্যবহৃত কোন পুস্তক, লেখা, অঙ্কন বা চিত্র, অথবা যে কোন ধর্মীয় উপাসনালয় বা উহার অভ্যন্তরে বা প্রতিমাসমূহ পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত অথবা যে কোন যানবাহনের উপরে খোদাইকৃত, মিনাকৃত, চিত্রিত বা প্রকারান্তরে প্রতিচিত্রিত অথবা কোন ধর্মীয় উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত কল্পমূর্তি বা স্বাভাবিক শিল্পকর্মের ক্ষেত্রে এই আইনের বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে না।

নির্যাতিত নারী ও শিশুর আশ্রয়স্থল ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার

নির্যাতিত নারী ও শিশুর আশ্রয়স্থল ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার 

যেকোনো  প্রকার নির্যাতনের শিকার বিভিন্ন বয়সী নারী ও শিশুদের আইনি সহায়তা ও সুরক্ষা দেওয়ার জন্যে ২০০৯ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার। ভিকটিমকে সুরক্ষা ও আইনগত অধিকার রক্ষা, বারবার নির্যাতনের হাত থেকে সুরক্ষা, পেশাগত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে। শুধু নির্যাতনের শিকার হলেই নয় কোনো নারী বা শিশু যদি হারিয়ে যায় কিংবা হারিয়ে যাওয়া কাউকে এ সেন্টারে এসে সহায়তা চাওয়া যেতে পারে।

মূলত পুলিশ রিফর্মস প্রজেক্টের আওতায় এ কেন্দ্রটি চালু করা হয়েছে। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পুলিশের পাশাপাশি ১০টি এনজিও আইনি সহায়তাসহ অন্যান্য কাজ করছে। এগুলো হচ্ছেঃ আইন ও সালিশ কেন্দ্র, অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট, অ্যাসোসিয়েশন ফর কারেকশন অ্যান্ড সোশ্যাল রেক্লেমেশন, অপরাজেয় বাংলাদেশ, এসিড সারভাইভরস ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ঢাকা আহছানিয়া মিশন ও মেরী স্টোপস্‌।
 
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নির্যাতিত নারী ও শিশুদের থাকার জন্য আটটি বেড রয়েছে, এখানে সর্বোচ্চ পাঁচ দিন পর্যন্ত থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এর পরও যদি কোনো ভিকটিমকে থাকতে হয়, তাহলে তাকে সংশ্লিষ্ট কোনো এনজিওতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তিনি যত দিন প্রয়োজন তত দিন থাকতে পারবেন। এ সেন্টারে ১০টি এনজিও রুটিন অনুযায়ী কাজ করে। যেমন শনিবারে অপরাজেয় বাংলাদেশ, রোববারে জাতীয় মহিলা পরিষদ, বুধবারে ব্লাস্ট এবং বৃহস্পতিবারে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবীরা এখানে কাজ করেন।
 
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের মুখ্য উদ্দেশ্য হলোঃ
.  সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা দূর করে নারী ও শিশুর প্রতি সংঘটিত অপরাধ প্রতিবেদনের সুযোগ নিশ্চিত করা।
২.  ভিকটিমকে সময়োপযোগী ও পেশাগত সেবা প্রদান করা।
৩.  ভিকটিমের সুরক্ষা ও আইনগত অধিকার রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করা।
৪.  সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ভিকটিমের সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করা।
৫.  ভিকটিমকে বারবার নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করা।
৬.  নারী ও শিশুর প্রতি সংঘটিত অপরাধের তথ্য সংরক্ষণ করা এবং অপরাধ নিবারণের জন্য কার্যকর নীতি তৈরি করা।

নির্যাতিত নারী ও শিশুদের জন্য এ কেন্দ্রটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। এখানে মোট ২১ জন মহিলা পুলিশ কাজ করছেন। এর মধ্যে সহকারী কমিশনার থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত রয়েছে। তা ছাড়া প্রতিটি এনজিওর পক্ষ থেকে প্রতিদিন একজন করে আইনজীবী আসেন। চিকিৎসক ও কাউন্সিলরও উপস্থিত থাকেন। যখন কোনো ভিকটিম অভিযোগ নিয়ে আসে, তখন খাতায় তার অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর শুরু হয় ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা যাচাই পর্ব। যাচাই শেষে দেখা হয় যে এটা আমলযোগ্য, না আমল অযোগ্য অপরাধ। এরপর ভিকটিমকে জানানো হয় যে আপনার সামনে এই আইনগত পথ বা দিক রয়েছে। তখন ভিকটিমের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অধিকাংশ ভিকটিমই সংসার টিকিয়ে রাখতে মীমাংসার পথে যেতে চায়। তখন উভয় পক্ষকে ডেকে তাদের কথা মনোযোগসহকারে শুনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ সময় আইনজীবী, চিকিৎসক, কাউন্সিলর, ডিউটি অফিসার  উপস্থিত থাকে। তবে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অর্থাৎ মারাত্মক ঘটনার ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা  গ্রহণ করা হয়।


সেবা পেতে যোগাযোগের ঠিকানা-
ডিউটি অফিসার : ০১৭৪৫৭৭৪৪৮৭, ০২-৯১১০৮৮৫
হেল্পলাইন : ০১৭৫৫৫৫৬৬৪৪, ০১৭৫৫৫৫৬৬৪৫, ০১৭৩৩২১৯০০৫, ০১৭৩৩২১৯০৩০
ইমেইল : vsc_dmp@yahoo.com

 
 
 

মানব পাচার প্রতিরোধে আছে কঠোর আইন

মানব পাচার প্রতিরোধে আছে কঠোর আইন 

২০১২ সালে প্রণীত মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে বলা হয়েছে মানব পাচার অর্থ কোন ব্যক্তিকে,  ভয়ভীতি প্রদর্শন বা বলপ্রয়োগ করে; বা প্রতারণা করে বা উক্ত ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক বা পরিবেশগত বা অন্য কোন অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে; বা অর্থ বা অন্য কোন সুবিধা লেনদেন-পূর্বক উক্ত ব্যক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এমন ব্যক্তির সম্মতি গ্রহণ করে; বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাহিরে যৌন শোষণ বা নিপীড়ন বা শ্রম শোষণ বা অন্য কোনো শোষণ বা নিপীড়নের  উদ্দেশ্যে বিক্রয় বা ক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ, নির্বাসন বা স্থানান্তর, চালান বা আটক করা বা লুকিয়ে রাখা বা আশ্রয় দেয়াকে বোঝাবে।


শাস্তি
মানব পাচার অপরাধ সংঘটনকারী কোন ব্যক্তি অনধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫(পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫০(পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
কোন ব্যক্তি এই আইনের আওতাধীন কোন অপরাধ সংঘটনে সহযোগী হলে উক্ত ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য ধার্যকৃত দণ্ডের সমপরিমাণ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোন ব্যক্তি বেআইনিভাবে অন্য কোন ব্যক্তিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করালে অথবা শ্রম বা সেবা প্রদান করতে বাধ্য করিলে বা ঋণ-দাস করে রাখলে বা বলপ্রয়োগ বা যে কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ অথবা হুমকি প্রদর্শন করে শ্রম বা সেবা আদায় করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ১২ (বার) বৎসর এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোন ব্যক্তি মানব পাচারের অপরাধ সংঘটনের অভিপ্রায়ে বা যৌন শোষণ বা নিপীড়নসহ এই আইনের ধারা ২(১৫) এ বর্ণিত অন্য কোন শোষণের উদ্দেশ্যে অন্য কোন ব্যক্তিকে অপহরণ, গোপন অথবা আটক করে রাখলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসর এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

মানব পাচারের অপরাধ সংঘটনের অভিপ্রায়ে কোন ব্যক্তি কোন নবজাত শিশুকে কোন হাসপাতাল, সেবা-সদন, মাতৃ-সদন, শিশু-সদন, বা উক্ত নবজাত শিশুর পিতা-মাতার হেফাজত হইতে চুরি করলে বা অপহরণ করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোন ব্যক্তি জবরদস্তি বা প্রতারণা করে বা প্রলোভন দেখিয়ে কোন ব্যক্তিকে পতিতাবৃত্তি অথবা অন্য কোন প্রকারের যৌন শোষণ বা নিপীড়নমূলক কাজে নিয়োগ করার উদ্দেশ্যে বিদেশ হতে বাংলাদেশে আনয়ন করলে বা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্থানান্তরিত করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোন ব্যক্তি মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি বা মামলার সাক্ষীকে বা তাহার পরিবারের কোনো সদস্যকে হুমকি প্রদান, ভীতি প্রদর্শন বা বলপ্রয়োগ করে এই আইনের অধীন রুজুকৃত কোন মামলার তদন্ত বা বিচারকার্যে কোনরূপ গুরুতর বিঘ্ন সৃষ্টি করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর এবং অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

অভিযোগ দায়ের ও বিচার
এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটিত হলে কোন ব্যক্তি পুলিশ অথবা ট্রাইব্যুনালের নিকট উক্ত অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ দায়ের করতে পারবে এবং পুলিশ এই ধরণের অভিযোগ আনয়নকারী ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান করবে এবং আইনি কার্যধারার কারণে অন্যরূপ প্রয়োজন না হলে, তার নাম পরিচয় গোপন রাখবে।

পুলিশের নিকট এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটনের সংবাদ আসলে বা ট্রাইব্যুনাল কোন অপরাধের তদন্তের নির্দেশ দিলে সংশ্লিষ্ট থানার উপ-পরিদর্শকের নিম্ন পদমর্যাদার নন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা এই আইনের অধীন তদন্তকার্য সম্পাদন করবেন।

এই আইনের অধীন অপরাধসমূহের দ্রুত বিচারের উদ্দেশ্যে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকের সমন্বয়ে যেকোন জেলায় মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত, সরকার প্রত্যেক জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে উক্ত জেলার মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল হিসাবে নিয়োগ বা ক্ষমতায়িত করতে পারবে। এই আইনের অধীন অপরাধসমূহের বিচার কেবল এই আইনের অধীন গঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচারযোগ্য হবে।

এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের অভিযোগ গঠনের ১৮০ (একশত আশি) কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল বিচারকার্য সম্পন্ন করবে। ট্রাইব্যুনালের কোন আদেশ, রায় বা দণ্ডের বিরুদ্ধে রায় প্রদান অথবা আদেশ বা দণ্ড ঘোষণার ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করা যাবে।

মানব পাচার বলতে যা বুঝায়

মানব পাচার বলতে যা বুঝায় 
১. মানব পাচার অর্থ কোনো ব্যক্তিকে-
(ক) ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বা বল প্রয়োগ করে বা
(খ) প্রতারণা করে বা উক্ত ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক বা পরিবেশগত বা অন্য কোনো অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে অথবা  
(গ) অর্থ বা অন্য কোনো সুবিধা লেনদেন-পূর্বক উক্ত ব্যক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ আছে এমন ব্যক্তির সম্মতি গ্রহণ করে; বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে যৌন শোষণ বা নিপীড়ন বা শ্রম শোষণ বা অন্যকোনো শোষণ বা নিপীড়নের উদ্দেশ্যে বিক্রি বা ক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ, নির্বাসন বা স্থানান্তর, চালান বা আটক করা বা লুকিয়ে রাখা বা আশ্রয় দেয়া হলে তা মানব পাচার বলে গণ্য হবে।
২. যে ক্ষেত্রে কোনো শিশু পাচারের শিকার হয়, সেক্ষেত্রে উপ ধারা (১) এর দফা (ক) হতে (গ) বর্ণিত মানব পাচার অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমগুলো অনুসৃত হয়েছে কিনা তা বিবেচিত হবে না।

থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) কেন কখন কীভাবে?


থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) কেন কখন কীভাবে? 
১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৪ (এস) ধারায় বলা হয়েছে পুলিশ স্টেশন হল ফৌজদারি জুরিসডিকশনের সর্বনিম্ন ইউনিট যেখানে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণ তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া বা ঘটতে যাচ্ছে এমন সব ঘটনা সম্পর্কে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু সব ঘটনার জন্য এজাহার দায়ের করা যায় না বা এজাহার হয় না। কাউকে কোন প্রকার হুমকি প্রদর্শন করলে এজাহার না করে তা সাধারণত থানায় রক্ষিত 'সাধারণ ডায়েরিতে' লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে: যাকে সংক্ষেপে বলা হয় জিডি।

কখন জিডি করতে হয়: যদি কোন কারণে কোন এলাকায় এক বা একাধিক লোকের মাঝে সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কিংবা কেউ কাউকে যখন কোন প্রকার হুমকি প্রদর্শন করে বা কোন ব্যক্তির প্রাণনাশের সম্ভাবনা দেখা দিলে 'মূল্যবান কোন ডকুমেন্ট বা সম্পত্তি হারিয়ে গেলে, ইত্যাদি কারণের উদ্ভব হলে থানায় গিয়ে কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারকে উপরোল্লিখিত ঘটনা মৌখিক বা লিখিত আকারে জানাতে হয় এবং ডিউটি অফিসার ঘটনাটিকে সাধারণ ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেন। এছাড়া যে কোন ঘটনা যা জিডিতে এন্ট্রি করা প্রয়োজন তার জন্য জিডি করতে হয়।

জিডি করার পদ্ধতি: উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলোর কোন একটি যদি আপনার জীবনে ঘটে যায় তাহলে আপনি থানায় জিডি করার জন্য লিখিত দরখাস্তের ৩টি কপি থানায় নিয়ে ডিউটি অফিসারকে দিয়ে জিডি এন্ট্রি করার জন্য বলবেন। প্রত্যেক জিডির একটি এন্ট্রি নম্বর ও তারিখ থাকে। দিউটি অফিসার একটি কপি থানায় জমা রাখবেন এবং অন্য একটি কপিতে জিডি এন্ট্রির নম্বর ও তারিখ লিখে থানায় সিলমোহর দিয়ে দরখাস্ত কারীকে ফেরত দিবেন। তৃতীয় কপিটি তদন্তকারী কর্মকর্তার জন্য রাখা হয়।

জিডিতে কি থাকে: প্রত্যেকটি থানায় রক্ষিত সাধারণ ডায়েরিতে নালিশকারীদের নাম, ঠিকানা, ধৃত ব্যক্তির নাম, উদ্ধার করা অস্ত্রের বিবরণ, জব্দকৃত মালামালের বিবরণ, আসামী কোর্টে চালান দেয়ার তথ্য, এলাকার খাদ্য শস্যের মূল্য ও উৎপাদন, যাতায়াত ব্যবস্থা, পরিবেশ, মহামারীর সংবাদ, রাজনৈতিক অবস্থা, থানায় উর্ধবতন কর্মকর্তাদের আগমন-প্রস্থান ইত্যাদি সব বিবরণ। মোদ্দাকথা, সাধারণ ডায়েরি হল একটি থানা এলাকার চলমান চিত্ররূপ।

জিডির তদন্ত: থানায় যে সব বিষয়ে জিডি করা হয়, সেসব বিষয়ের মধ্যে যেগুলো Non Cognizable offence (অধর্তব্য অপরাধ) সেগুলোর তদন্ত সম্পর্কে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৫ (২) ধারায় বলা হয়েছে- 'প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্তের আদেশ ব্যতীত কোন পুলিশ কর্মকর্তা নন কগানাইজ্যাবল মামলার তদন্ত করতে পারবেন না।' অর্থাৎ তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।কিন্তু যেসব জিডির বিষয়বস্তু আমলযোগ্য অপরাধ (Cognizable offence) সেসব জিডির বিষয়বস্তু থানা কর্তৃপক্ষ সঙ্ঘে সঙ্ঘে আমলে নিয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করবেন। এখানে উল্লেখ্য, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৭ (বি) ধারায় বলা হয়েছে 'থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যদি মনে করেন যে, তদন্তের জন্য যথেষ্ট গ্রাউন্ড (Sufficient ground) নাই, তাহলে তিনি তদন্তের জন্য ব্যবস্থা নিবেন না অথবা তদন্ত করবেন না।

জিডির গুরুত্ব : আইনগত সহায়তা লাভের জন্য জিডির গুরুত্ব বিদ্যমান। কেবলমাত্র একটি জিডির ভিত্তিতেই একটি মামলার শুরু হতে অথবা কোন অপরাধের আশঙ্কা থেকে একটি জিডি করার পর সে অপরাধটি সংঘটিত হলে আদালতে ওই জিডি সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হয়ে থাকে।

সাধারণ ডায়েরি ও সাধারণ মানুষের ভাবনা : থানা-পুলিশের আতঙ্কময় কাজের জন্য জনসাধারণ সাধারণ ডায়েরিকে (জিডি) সাধারণভাবে গ্রহণ করতে পারে না। তারা থানায় জিডি হওয়া মানেই ভয়ে অস্থির হয়ে যায়। সাধারণ মানুষকে ভাবতে হবে এই ভাবে যে, পিআর-১৯৮৩-এর প্রবিধান ২০১(বি) অনুযায়ী থানায় ওসি অসুস্থ হয়ে অফিসে আসতে না পারলে যদি জিডি করতে হয়, তাহলে জিডি নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

দেনমোহর স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার

দেনমোহর স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার 


দেনমোহর কি ?
দেনমোহর হলো কিছু টাকা বা অন্য কিছু সম্পত্তি যা বিবাহের প্রতিদান স্বরূপ স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে পাবার অধিকারী।

দেনমোহর নির্ধারণ পদ্ধতি : বর ও কনের উভয়ের দিক বিবেচনা করে দেনমোহর নির্ধারিত হয়। দেনমোহর কত হবে তা নির্ণয়কালে স্ত্রীর পিতার পরিবারের অন্যান্য মহিলা সদস্যদের ক্ষেত্রে যেমন স্ত্রীর বোন, খালা, ফুফুদের ক্ষেত্রে দোনমোহরের পরিমাণ কত ছিলো তা বিবেচনা করা হয়। তা ছাড়া স্ত্রীর পিতার আর্থ-সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। অপর দিকে বরের আর্থিক ক্ষমতার দিকও বিবেচনা রাখা হয়। এসব দিক বিচার বিবেচনা করেই মূলত দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই স্বামী নূন্যতম ১০ দিরহাম বা সমপরিমাণ অর্থ অপেক্ষা কম নির্ধারণ করতে পারবেন না।

দেনমোহরের প্রকারভেদ দেনমোহরের বাবদ দেয় অর্থ দুই ভাগে বিভক্ত :
১. তাৎক্ষনিক দেনমোহর : তাৎক্ষনিক দেনমোহর স্ত্রী চাওয়ামাত্র স্বামী পরিশোধ করতে বাধ্য থাকে। এ ক্ষেত্রে স্ত্রী তাৎক্ষনিক দেনমোহর না পাওয়া পর্যন্ত স্বামীর সঙ্গে বসবাস ও দেহমিলনের সুযোগ দিতে অস্বীকার করতে পারেন।

২. বিলম্বিত দেনমোহর : দেনমোহরের যে অংশটুকু স্বামীর মুত্যুর পর কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদ বা তালাকের পর স্ত্রী পেয়ে থাকে। দেনমোহর আদায়ের আইনি অধিকার তালাকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ বা স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রী তাঁর বিলম্বিত দেনমোহর আদায়ের জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা করে তা আদায় করতে পারেন। অবশ্যই তা তালাক বা স্বামীর মৃত্যুর তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। স্বামীর মৃত্যু হলেও বকেয়া দেনমোহর একটি ঋণের মতো। তাই স্বামীর উত্তরাধিকারীরা এটি প্রদানে বাধ্য। তা না হলে মৃত স্বামীর উত্তরাধিকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করে দেনমোহর আদায় করা যায়। কোনো স্ত্রী যদি স্বামীর আগে মারা যান তাহলে দেনমোহর মাফ হয় না। স্ত্রী উত্তরাধীকারীরা এই দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী এবং মামলা করার অধিকার রাখেন।

কখন দেনমোহর অর্ধেক দেওয়া যায় ?
বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য মিলনের পূর্বে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে কিংবা স্বামীর মৃত্যু হলে সম্পূর্ণ দেনমোহর অর্ধেক দিতে হবে।

স্ত্রী তালাক দিলে কি দেনমোহর দেয়া লাগে?
অনেক সময় দেখা যায় বিবাহ বিচ্ছেদের সময় বলা হয় যদি স্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়ে নিজ ইচ্ছায় তালাক দেন তাহলে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে না। এই ধারনাটি সঠিক নয়, স্বামী বা স্ত্রী যেই তালাক দিননা কেন, দেনমোহরের টাকা অবশ্যই স্ত্রীকে প্রদান করতে হয়।

কখন দেনমোহর মওকুফ হয় ?
স্ত্রী ইচ্ছা করলে তার স্বামী বা স্বামীর উত্তরাধিকারীগনের পক্ষে আংশিক বা সম্পূর্ণ দেনমোহর মওকুফ করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে কোন প্রকার প্রতিদান ছাড়াও মওকুফ বৈধ হবে। তবে অবশ্যই মওকুফটি পূর্ণ সম্মতিতে হতে হবে।

মুসলিম আইনে তালাকের প্রক্রিয়া

মুসলিম আইনে তালাকের প্রক্রিয়া
 স্ত্রী কীভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারে?

একজন স্ত্রী যখন ইচ্ছা তখন স্বামীকে তালাক দিতে পারেন না। মুসলিম আইনে স্বামীকে তালাক দেয়ার ক্ষেত্রে স্ত্রী সীমিত অধিকার ভোগ করেন।

নিম্নে লিখিত যেকোন উপায়ে একজন স্ত্রী তালাক সম্পন্ন করতে পারেন।
 ক. স্ত্রী আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন।
 খ. তালাক-ই-তৌফিজ এর মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন।
 গ. খুলা-র মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন।
 ঘ. স্বামী-স্ত্রী দুজনই মুবারাতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন।


১.
১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন অনুযায়ী একজন স্ত্রী কী কী কারণে স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারে?
> চার বছর যাবৎ স্বামী নিরুদ্দেশ থাকলে বা কোন খোঁজ খবর না নিলে।
> ২ বছর যাবৎ স্ত্রীর খোরপোষ প্রদানে অবহেলা বা ব্যর্থ হলে।
> স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করলে।
> স্বামী ৭ বছর বা তার বেশী সময়ের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে।
> স্বামী কোন যুক্তি সম্মত কারণ ছাড়া ৩ বছর ধরে দাম্পত্য দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হলে।
> বিয়ের সময় স্বামী পুরুষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়েরের সময় তা পর্যন্ত বজায় থাকলে।
> স্বামী ২ বছর ধরে অপ্রকিতস্থ থাকলে অথবা কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্থ বা মারাত্মক যৌনরোগে আক্রান্ত থাকলে।
> ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে অর্থাৎ নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে হয়ে থাকলে এবং ১৯ বছর হওয়ার আগে বিয়ে অস্বীকার করলে তবে এক্ষেত্রে স্বামীর সাথে দাম্পত্য মিলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকলে মামলা করা যাবে না।
>নিম্নলিখিত যে কোন অর্থে স্বামী স্ত্রীর সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করলে -
ক. স্বামী যদি স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে থাকেন।
খ. স্বামী খারাপ চরিত্রের মেয়েদের সাথে মেলামেশা করলে কিংবা নৈতিকতা বর্জিত জীবনযাপন করলে।
গ. স্ত্রীকে জোর পূর্বক নৈতিকতা বিহীন জীবন যাপনের জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করলে।
ঘ. স্ত্রীর অমতে তার সম্পত্তি হস্তান্তর করা কিংবা স্ত্রীকে তার সম্পত্তির ওপর বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়া।
ঙ. স্ত্রীকে তার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে বাধা দিলে।
চ. যদি স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকে এবং পবিত্র কুরানের নির্দেশ অনুসারে স্বামী তাদের সাথে সমান ব্যবহার না করে।
> মুসলিম আইনে স্বীকৃত অন্য যে কোন যুক্তি সঙ্গত কারণের জন্য মামলা করতে পারেন।

 
২. তালাক-ই-তৌফিজ
   কাবিন নামার ১৮ নং কলামে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে বিয়ে বিচ্ছেদের ক্ষমতা দেয়াকে তালাক-ই-তৌফিজ বলে। এই তালাক-ই-তৌফিজ এর ক্ষমতা দেয়া থাকলে স্ত্রী আদালতের আশ্রয় ছাড়াই স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। এক্ষেত্রে স্বামীর মতোই স্ত্রী তালাকের নোটিশ চেয়ারম্যান এর কাছে পাঠাবেন। নোটিশ প্রাপ্তির ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে।


৩. খুলা -
    খুলা তালাক হলো স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীর দাম্পত্য অধিকার থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রস্তাব।এক্ষেত্রে স্ত্রী কোন কিছুর বিনিময়ে স্বামীকে বিচ্ছেদের বিষয়ে রাজী করানোর চেষ্টা করবেন। স্বামী রাজী না হলে এভাবে বিচ্ছেদ ঘটতে পারে। বিচ্ছেদের উদ্যোগ অবশ্যই স্ত্রীর কাছ থেকে হতে হবে।


৪. মুবারাত -
    স্বামী - স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে বিয়ে বিচ্ছেদ সম্পন্ন হলে তাকে মুবারাত বলে। যখন স্বামী - স্ত্রীর মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদের ইচ্ছাটি পারস্পরিক হয় তখন একপক্ষ প্রস্তাব করে এবং চুক্তির মাধ্যমে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। যিনি বিয়ে বিচ্ছেদের প্রস্তাব দিবে তিনিই নোটিশ পাঠাবেন।


স্বামী কীভাবে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারবেন?
  একজন মুসলিম পূর্ণ বয়স্ক সুস্থ মস্তিষ্কের পুরুষ যে কোন সময়ে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন। কিন্তু সে মুখে বা লিখে যেভাবে তালাক দিক না কেন তা সাথে সাথে কার্যকর হবে না।

   ১৯৬১ সালের পারিবারিক আইন অধ্যাদেশর ৭(১) ধারা অনুযায়ী যে ব্যক্তি তালাক দিবেন তিনি লিখিত ভাবে তালাকের নোটিশ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান / সিটি কর্পোরেশন বরাবরে ও স্ত্রীর কাছে এক কপি নোটিশ পাঠাবেন।

> নোটিশ না পাঠালে ১ বছর কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
> নোটিশ পাওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান/মেয়র শালিসী পরিষদ গঠন করে উভয়ের মধ্যে সমঝোতা আনার চেষ্টা করবেন।
> শালিসী পরিষদ উভয়কে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতি ৩০ দিনে একটি নোটিশ করে মোট ৩ টি নোটিশ প্রদান করবেন। এর মধ্যে স্বামী নোটিশ প্রত্যাহার না করলে তালাক কার্যকর হবে।স্বামী নোটিশ প্রত্যাহার  করলে তালাক কার্যকর হবে না।
> তালাক প্রদানের সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে তালাক কার্যকর হবে না।তবে সন্তান প্রসব হওয়ার পর পর্যন্ত নোটিশ বহাল থাকলে সন্তান জন্ম নেওয়ার ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে।স্বামী নোটিশ প্রত্যাহার করে নিলে এক্ষেত্রে তালাক কার্যকর হবে না।
> ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের অধ্যাদেশের কোথাও নোটিশ প্রদান না করলে তালাক হবে না এ কথা উল্লেখ নেই। তবে স্বামী শাস্তি পাবেন।
> স্বামী কর্তৃক তালাকের ক্ষেত্রে স্বামী যখন ইচ্ছা তখন একতরফা ভাবে তালাক প্রদান করতে পারে। তাকে তালাকের কারণ দেখাতে হয়না। কেন স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলেন তা স্ত্রী জানতে চাইতে পারেন না। এটা স্বামীর একতরফা ক্ষমতা।
 

ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে কি অপহরণ?

ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে কি অপহরণ? 

ভালোবাসার সম্পর্ক সব সময় যে বিয়ে অবধি গড়ায় তা নয়।  অনেক সময়েই বিয়ে পর্যন্ত ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।  বাবা-মায়ের অসম্মতির কারণে অনেক ভালোবাসার সম্পর্কে সমাপ্তি ঘটে।  অনেকেই বাবা-মায়ের অসম্মতির পরও নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন বিয়ে করার জন্য।  ঘর পালিয়ে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যান দুজনেই। করে ফেলেন পরিবারকে ছেড়ে যাওয়ার দুঃসাহসিক কাজটি।

তারপরই শুরু হয় আসল বিপত্তি।  এই পরিস্থিতিতে বেশীরবাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মেয়ের বাবারা থানায় গিয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন; এবং মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন তার নাবালিকা মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে।  এরপর যথারীতি চলে আইনি প্রক্রিয়া।

কিন্তু এক্ষেত্রে আইনি সমাধান কি তা দেখি আমরা।  ছেলেমেয়ে যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয়, অর্থাৎ ২১ বছরের ছেলে ও ১৮ বছরের মেয়ে স্বেচ্ছায় বিয়ে করলে তাদের কিছু করতে পারবে না। এখানে অপহরনের মামলা করলেও মেয়ে যদি হলফনামা দিয়ে স্বেচ্ছায় আদালতে জবানবন্দি দেন, তাহলে এ মামলা খারিজ(বাতিল) হয়ে যেতে পারে।  এক্ষেত্রে আদালতের কিছু করার থাকে না; মেয়ের মতামতকে মূল্য দিয়ে থাকেন।  মেয়েকে আদালতে জন্মসনদ বা এসএসসি’র মূল সনদ দাখিল করতে হবে।  তবে যদি মেয়েটি নাবালক অর্থাৎ ১৮ বছরের কম বয়সী হয় তাহলে কি হবে? আইনের চোখে নাবালকের স্বেচ্ছায় মতামতের কোন মুল্য নেই।  এক্ষেত্রে আদালত মেয়েটির কল্যাণের দিক বিবেচনা করে সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত নিরাপদ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিবেন।

অনেক সময় দেখা যায়, মেয়ের পরিবার বিয়ে মেনে নিয়েছে বলে কৌশলে মেয়েকে তাদের জিম্মায় নিয়ে যেভাবেই হোক মেয়েকে রাজি করিয়ে প্রেমিক-স্বামীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে জবানবন্দি দেন, তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে বিয়ে করেছেন।  এক্ষেত্রে ছেলেটি কোনো অপরাধ না করেও এবং উভয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও ফেঁসে যেতে পারেন।

অনেকে যারা অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া বা পালিয়ে বিয়ে করতে চায় তারা কোর্ট ম্যারেজ করতে আগ্রহী।  অনেকে ভাবেন কোর্ট ম্যারেজ করলেই হয়ে গেলো।  আসলে কোর্ট ম্যারেজ বলতে কোনো কিছু নেই আইনে।  এটি একটি প্রচলিত শব্দ।  

অনেকে মনে করেন কোর্ট ম্যারেজ হয়তো কোর্টে গিয়ে বিয়ে করা।  অথবা মাজিস্ট্রেট-এর সামনে বিয়ে করা।  আসলে তা নয়।  কোর্ট ম্যারেজ করতে হলে যেতে হবে কোন নোটারী পাবলিকের (সরকারী রেজিস্টার্ড উকিল) কাছে।  তিনি ১০০ বা ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে একটি হলফনামায় সই করাবেন যাতে লিখা থাকবে আপনারা প্রাপ্তবয়স্ক এবং  সেচ্ছায় বিয়ে করেছেন।  এটি আসলে কোনো বিয়ে নয়; বিয়ের ঘোষণা মাত্র।

তার মানে বিয়ে করতে হবে যথারিতি কাজী অফিসে।  রেজিস্ট্রী কাবিনমুলে।  কাজী অফিসে কাবিননামায় সই করতে হবে।  কাজি’কে ছেলেমেয়েদের এসএসসি’র সার্টিফিকেট বা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হবে বয়স প্রমানের জন্য।  বয়স অবশ্যই আঠারো (মেয়ে) ও একুশ (ছেলে) হতে হবে।  আর লাগবে দুইজন সাক্ষী।  কাবিননামাই বিয়ের প্রধান আইনী দলিল। তবে জেনে রাখবেন, নোটারী পাবলিকের কাছে করা হলফনামার কোনো দাম নেই যদি কাবিননামা না থাকে।  কাবিননামা থাকলে বিয়ের পক্ষে আর কোনো ডকুমেন্টই লাগবেনা। কাবিননামাই সব।

আইনে অপহরণের সংজ্ঞা এবং শাস্তি
বলপ্রয়োগ বা প্রলুব্ধ করে বা ফুসলিয়ে বা ভুল বুঝিয়ে বা ভীতি প্রদর্শন করে কোন স্থান থেকে কোন ব্যক্তিকে অন্য কোন স্থানে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে অপহরণ।

‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ এবং ‘দণ্ডবিধি আইন’ উভয় আইনেই অপহরণের মামলা দায়ের করা যায়।  নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী নারী অপহরণের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে।  দণ্ডবিধির ৩৬৬ ধারা অনুযায়ী কোনো নারীকে বিয়েতে সম্মতিদানে বাধ্য করার অভিপ্রায়ে অপহরণ বা প্ররোচিত করলে কিংবা জোরপূর্বক সহবাসে বাধ্য করলে, তাহলে দায়ী ব্যক্তি ১০ বছর যাবৎ যে কোন মেয়াদে সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
 

জমি কেনার আগে করনীয়, এড়িয়ে চলুন ঝামেলা

জমি কেনার আগে করনীয়, এড়িয়ে চলুন ঝামেলা 

ক্রয়ের আগে অবশ্যই জমি সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র খুব সতর্কতার সাথে যাচাই বাছাই করা উচিত। কারন সামান্যতম অসতর্কতার ফলে আপনি জালিয়াতির শিকার হতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে আপনি আপনার কষ্টার্জিত টাকা ও মূল্যবান সময় দুটোই হারাবেন। তাই জমিজমা ক্রয়ে একটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

  • যে ব্যাক্তি জমিটি বিক্রয় করবে ঐ জমিতে বিক্রয়কারীর মালিকানা আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। তাই প্রস্তাবিত জমিটির সর্বশেষ রেকর্ডে বিক্রয়কারীর নাম আছে কিনা দেখতে হবে। সিএস, আরএস ও অন্যান্য খতিয়ানের ক্রম মিলেয়ে দেখতে হবে। যিনি আপনার কাছে জমিটি বিক্রি করছে তিনি যদি অন্য কোনো ব্যাক্তির কাছ থেকে জমিটি ক্রয় করে থাকেন তাহলে অবশ্যই তাকে জমিটির ভায়া দলিল রেজিস্ট্রিশানের সময় উপস্থাপন করতে হবে।
  • যেকোনো উপায়ে জমির মালিকানা হলেও জমিটির নামজারি ঠিক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।  যদি বিক্রেতা ওয়ারিশসূত্রে জমিটির মালিক হয় তবে বিক্রেতার ফরায়েজ সার্টিফিকেট, বাটোয়ারা দলিল, পূর্বপুরুষদের মালিকানার ধারাবাহিকতা পরীক্ষা করে নিতে হবে। এই ধরনের জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রিয়েমশন বা অগ্রক্রয় একটি গুরত্তপূর্ণ বিষয়, তাই আইনানুযায়ী সকল অংশীদারকে নোটিশ প্রদান করতে হবে। কেউ আপত্তি জানালে সেটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জমি ক্রয় করা উচিত নয়। এজমালি জমি ক্রয়ে সকল অংশীদারগণকে সাফ কবলা দলিলে সাক্ষী রাখা অতীব জরুরী তাহলে পরবর্তীতে কোন আপত্তি তোলার সুযোগ থাকবে না। সবচেয়ে গুরত্তপূর্ণ বিষয় হল বিক্রেতা জমির যতটুকু অংশ বিক্রয় করতে সক্ষম তার বেশী ক্রয় করা একদমই উচিত নয়।
  • বিক্রেতা যদি অন্য কোন সূত্রে জমিটির মালিক হয় যেমন-দান, নিলাম, ডিক্রিমূলে ইত্যাদি তবে জমি প্রাপ্তির সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পরীক্ষা করা উচিত।
  • জমিটির হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা আছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। ভূমি কর না দেয়ায় অনেক সময় সার্টিফিকেট মামলা করা হয়। এছাড়াও ভূমিতিতে অন্য কোন মামলা আছে কিনা তা দেখতে হবে।
  • জমিতে বিক্রেতার শান্তিপূর্ণ দখল কার্যকর আছে কিনা তা ভালো করে যাচাই করে দেখতে হবে। কারন কোন সম্পত্তির বা জমির প্রকৃত মালিকানা বলতে দলিল ও দখল দুই-ই বুঝায়। একটি ছাড়া অন্যটি অসম্পূর্ণ।
  • জমিটির পাশে সরকারের খাস জমি আছে কিনা অথবা জমিটিতে সরকারের কোন স্বার্থ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। জমিটি অর্পিত কিংবা পরিতিক্ত সম্পত্তির তালিকায় আছে কিনা, তা খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও দেখতে হবে জমিটি আগে কখন অধিগ্রহণ হয়েছিল কিনা বা প্রক্রিয়াধীন আছে কিনা অথবা ওয়াকফ, দেবোত্তর বা কোর্ট অব ওয়ার্ডসের জমি কিনা।
  • জমিটি কখনো খাজনা অনাদায়ে বা অন্য কোন কারনে নিলাম হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে।
  • ঋণের কারনে জমিটি ব্যাংকের কাছে বন্ধক আছে কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে।
  • জমিটির প্রকৃত মালিক জমিটিতে কোনো অ্যাটর্নি বা আমমোক্তার নিয়োগ করেছে কিনা জেনে নিতে হবে। বিক্রেতা যদি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামার মাধ্যমে ক্ষমতা পেয়ে থাকে, তাহলে  যাচাই করে দেখতে হবে আসলে তিনি জমিটি বিক্রি করার পাওয়ার পেয়েছেন কিনা। আমমোক্তারনামাটি যথাযথ হয়েছে কিনা তা যাচাই করার জন্যে প্রকৃত মালিকের সাথে যোগাযোগ করে দেখতে হবে।
  • জমিটি এর আগেও অন্য কোন ব্যাক্তির কাছে বিক্রি করা হয়েছিল কিনা তা দেখে নিতে পারেন।
  • যদি আপনি কোনো আদিবাসীর জমি কিনতে চান তাহলে রেজিস্ট্রি করার সময় রেভিনিউ কর্মকর্তার লিখিত অনুমতি নিতে হবে। তবে এক আদিবাসী অন্য আদিবাসীর কাছে জমি বিক্রি করতে এই নিয়মটি মানতে হবেনা।

অতএব, জমি ক্রয়ের সময় উপরোক্ত বিষয় গুলো বিবেচনা করে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে জমি ক্রয় করলে কোনরূপ জালিয়াতির শিকার হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

সন্তানের অভিভাবকত্ব

সন্তানের অভিভাবকত্ব 

মনির ও লিপির বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর। তাদের একটি ছেলে আছে। সংসারে বনিবনা না হওয়ায় মনির লিপিকে তালাক দেয় ও চার বছরের ছেলেকে নিজের কাছে রেখে দেয়। লিপি তার ছেলেকে দেখতে পর্যন্ত পারে না, মনির তাকে দেখতে দেয় না। আইন অনুযায়ী লিপি তার ছেলেকে ৭ বছর পর্যন্ত নিজের কাছে রাখতে পারবে। মনির এই অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করতে পারবে না। অভিভাবকত্ব বা জিম্মাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে তার নিষ্পত্তি করবে আদালত। সন্তানের অভিভাবকত্ব ও জিম্মাদারিত্ব নিয়ে মা বাবার কেউ আদালতের কাছে গেলে আদালত সন্তানের স্বার্থ এবং মঙ্গল যার কাছে বেশি রক্ষিত হবে তাকেই জিম্মাদারের অধিকার দেবে।

সন্তানের প্রকৃত আইনগত অভিভাবক
পারিবারিক আইনের আওতায় প্রায় সকল আইনেই পিতা সন্তানের প্রকৃত আইনগত অভিভাবক। সাধারণত সকল ধর্মেই পিতা-মাতার বিচ্ছেদ অথবা যে কোন একজন বা দুইজনের মৃত্যুর পরই অভিভাবকত্বের প্রশ্নটি আসে। প্রত্যেক ধর্মেই আলাদা আলাদা অভিভাবকত্ব আইন আছে।
মুসলিম পারিবারিক আইনে সন্তানের ৩ ধরনের অভিভাবকত্বের কথা বলা আছে যথা: সন্তানের অভিভাবকত্ব, সন্তানের সম্পত্তির অভিভাবকত্ব, সন্তানের বিয়ের অভিভাবকত্ব।
 
সন্তানের অভিভাবকত্বে মা’র অধিকার  
মুসলিম আইনে শিশু সন্তানের দেখাশোনার বিষয়ে (জিম্মাদারের ক্ষেত্রে) সবচেয়ে বড় অধিকারী হলেন মা। তিনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সন্তানের জিম্মাদার হয়ে থাকেন, কিন্তু কখনো অভিভাবক হতে পারেন না। এই সময়কাল হলো ছেলে সন্তানের ক্ষেত্রে ৭ বছর, মেয়ে সন্তানের ক্ষেত্রে বয়ো:সন্ধিকাল পর্যন্ত।
তবে নাবালকের কল্যাণেই নির্দিষ্ট বয়সের পরেও মায়ের জিম্মাদারিত্বে সন্তান থাকতে পারে। যদি আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, সন্তান মায়ের নিকট থাকলে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ স্বাভাবিক হবে, সন্তানের কল্যাণ হবে এবং স্বার্থ রক্ষা হবে- সেক্ষেত্রে আদালত মাকে ঐ বয়সের পরেও সন্তানের জিম্মাদার নিয়োগ করতে পারেন।
 
মায়ের অবর্তমানে শিশুর জিম্মাদার
মা’র অবর্তমানে যারা শিশুর জিম্মাদার হতে পারেন: মায়ের মা যত উপরের দিকে হোক (নানী, নানীর মা); পিতার মা যত উপরের দিকে হোক (দাদী, দাদীর মা); পূর্ণ বোন (মা,বাবা একই); বৈপিত্রেয় বোন (মা একই কিন্তু বাবা ভিন্ন); আপন বোনের মেয়ে (যত নিচের দিকে হোক); বৈপিত্রেয় বোনের মেয়ে (যত নিচের দিকে হোক); পূর্ণ খালা (যত উপরের দিকে হোক); বৈপিত্রেয় খালা (যত উপরের দিকে হোক); পূর্ণ ফুফু (যত উপরের দিকে হোক)
উপরে উল্লেখিত আত্মীয়গণ কেবলমাত্র উপরের ক্রমানুসারে একজনের অবর্তমানে বা অযোগ্যতার কারণে অন্যজন জিম্মাদারিত্বের অধিকারী হবেন।
 
নাবালক শিশুর সম্পত্তির ক্ষেত্রে  অভিভাবক
মুসলিম আইনে কোন নাবালক শিশুর সম্পত্তির তিন ধরনের অভিভাবক হতে পারে:
 ক. আইনগত অভিভাবক; খ. আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক; গ. কার্যত অভিভাবক
 
আইনগত অভিভাবক
আইনগত অভিভাবকরা হলেন- বাবা; বাবার ইচ্ছাপত্রে (উইল) উল্লেখিত ব্যক্তি; বাবার বাবা (দাদা); বাবার বাবার ইচ্ছাপত্রে (উইল) উল্লেখিত ব্যক্তি। উপরে উল্লেখিত আইনগত অভিভাবকগণ নিম্নলিখিত কারণে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি অথবা বন্ধক দিতে পারেন: ১। উক্ত সন্তানের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য তার অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি অথবা বন্ধক দিতে পারেন। ২। নাবালকের ভরণপোষণ, উইলের দাবী, ঋণ, ভূমিকর পরিশোধ ইত্যাদির জন্য একজন আইনগত অভিভাবক নিচের এক বা একাধিক কারণে স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করতে পারেন। ক. ক্রেতা দ্বিগুন দাম দিতে প্রস্তুত, খ. স্থাবর সম্পত্তিটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, গ. সম্পত্তিটি রক্ষণাবেক্ষণে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে।
 
আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক
যখন আইনগত অভিভাবক থাকেন না তখন আদালত নাবালকের সম্পত্তি দেখাশুনার জন্য অভিভাবক নিয়োগ করতে পারেন। এভাবে নিযুক্ত অভিভাবকরাই হলেন আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক। তবে এই অভিভাবক আদালতের অনুমতি ছাড়া কোন কারণেই সম্পত্তির কোন অংশ বিক্রি, বন্ধক, দান, বিনিময় বা অন্য কোন প্রকার হস্তান্তর করতে পারবে না।
 
কার্যত অভিভাবক
নাবালককে রক্ষার জন্য আইনগত অভিভাবক বা আদালত নিযুক্ত অভিভাবক না হয়েও যে কেউ নাবালকের অভিভাবক হিসেবে কাজ করতে পারেন। বাস্তবে এরকমভাবে যিনি অভিভাবক হিসেবে কাজ করেন তিনিই হলেন কার্যত অভিভাবক। তবে তিনি কোন অবস্থাতেই সম্পত্তির স্বত্ব, স্বার্থ বা অধিকার হস্তান্তর করতে পারবেন না।
 
হিন্দু আইনে অভিভাবকত্ব
হিন্দু আইনেও অভিভাবকত্বের কথা বলা হয়েছে। এই আইনে ৩ ধরনের অভিভাবক স্বীকৃত। ক. স্বাভাবিক অভিভাবক; খ. বাবা কর্তৃক উইল দ্বারা নিযুক্ত অভিভাবক; গ. গার্ডিয়ানস এন্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট ১৮৯০ অনুযায়ী আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক। এছাড়া ‘কার্যত অভিভাবক’ হিসেবেও অভিভাবক দেখা যায়।
বাবার অবর্তমানে মা নাবালকের শরীর ও সম্পত্তির আইনগত অভিভাবক কিন্তু বাবা যদি উইল করে অন্য কোন ব্যক্তিকে নাবালকের অভিভাবক নিযুক্ত করেন তাহলে মা অপেক্ষা সেই ব্যক্তির দাবী গণ্য হবে। বাবা মা কেউ না থাকলে প্রয়োজনে আদালত নাবালকের নিকবর্তী আত্মীয়দের মধ্য থেকে একজনকে নাবালকের অভিভাবক নিযুক্ত করতে পারেন।

প্রযুক্তিগত বোকামি ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত

  ইন্টারনেট ১৯৬৯ সালে আবিস্কৃত হয়। গত ১৯৯৫ সালে ইন্টারনেট বাণিজ্যিক বা কর্পোরেট পন্য হিসেবে আবির্ভূত হয়ে চলমান রয়েছে। গত ১৯৯০ দশকে টেলিফো...