Wednesday, 2 September 2015

সন্তানের অভিভাবকত্ব

সন্তানের অভিভাবকত্ব 

মনির ও লিপির বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর। তাদের একটি ছেলে আছে। সংসারে বনিবনা না হওয়ায় মনির লিপিকে তালাক দেয় ও চার বছরের ছেলেকে নিজের কাছে রেখে দেয়। লিপি তার ছেলেকে দেখতে পর্যন্ত পারে না, মনির তাকে দেখতে দেয় না। আইন অনুযায়ী লিপি তার ছেলেকে ৭ বছর পর্যন্ত নিজের কাছে রাখতে পারবে। মনির এই অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করতে পারবে না। অভিভাবকত্ব বা জিম্মাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে তার নিষ্পত্তি করবে আদালত। সন্তানের অভিভাবকত্ব ও জিম্মাদারিত্ব নিয়ে মা বাবার কেউ আদালতের কাছে গেলে আদালত সন্তানের স্বার্থ এবং মঙ্গল যার কাছে বেশি রক্ষিত হবে তাকেই জিম্মাদারের অধিকার দেবে।

সন্তানের প্রকৃত আইনগত অভিভাবক
পারিবারিক আইনের আওতায় প্রায় সকল আইনেই পিতা সন্তানের প্রকৃত আইনগত অভিভাবক। সাধারণত সকল ধর্মেই পিতা-মাতার বিচ্ছেদ অথবা যে কোন একজন বা দুইজনের মৃত্যুর পরই অভিভাবকত্বের প্রশ্নটি আসে। প্রত্যেক ধর্মেই আলাদা আলাদা অভিভাবকত্ব আইন আছে।
মুসলিম পারিবারিক আইনে সন্তানের ৩ ধরনের অভিভাবকত্বের কথা বলা আছে যথা: সন্তানের অভিভাবকত্ব, সন্তানের সম্পত্তির অভিভাবকত্ব, সন্তানের বিয়ের অভিভাবকত্ব।
 
সন্তানের অভিভাবকত্বে মা’র অধিকার  
মুসলিম আইনে শিশু সন্তানের দেখাশোনার বিষয়ে (জিম্মাদারের ক্ষেত্রে) সবচেয়ে বড় অধিকারী হলেন মা। তিনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সন্তানের জিম্মাদার হয়ে থাকেন, কিন্তু কখনো অভিভাবক হতে পারেন না। এই সময়কাল হলো ছেলে সন্তানের ক্ষেত্রে ৭ বছর, মেয়ে সন্তানের ক্ষেত্রে বয়ো:সন্ধিকাল পর্যন্ত।
তবে নাবালকের কল্যাণেই নির্দিষ্ট বয়সের পরেও মায়ের জিম্মাদারিত্বে সন্তান থাকতে পারে। যদি আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, সন্তান মায়ের নিকট থাকলে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ স্বাভাবিক হবে, সন্তানের কল্যাণ হবে এবং স্বার্থ রক্ষা হবে- সেক্ষেত্রে আদালত মাকে ঐ বয়সের পরেও সন্তানের জিম্মাদার নিয়োগ করতে পারেন।
 
মায়ের অবর্তমানে শিশুর জিম্মাদার
মা’র অবর্তমানে যারা শিশুর জিম্মাদার হতে পারেন: মায়ের মা যত উপরের দিকে হোক (নানী, নানীর মা); পিতার মা যত উপরের দিকে হোক (দাদী, দাদীর মা); পূর্ণ বোন (মা,বাবা একই); বৈপিত্রেয় বোন (মা একই কিন্তু বাবা ভিন্ন); আপন বোনের মেয়ে (যত নিচের দিকে হোক); বৈপিত্রেয় বোনের মেয়ে (যত নিচের দিকে হোক); পূর্ণ খালা (যত উপরের দিকে হোক); বৈপিত্রেয় খালা (যত উপরের দিকে হোক); পূর্ণ ফুফু (যত উপরের দিকে হোক)
উপরে উল্লেখিত আত্মীয়গণ কেবলমাত্র উপরের ক্রমানুসারে একজনের অবর্তমানে বা অযোগ্যতার কারণে অন্যজন জিম্মাদারিত্বের অধিকারী হবেন।
 
নাবালক শিশুর সম্পত্তির ক্ষেত্রে  অভিভাবক
মুসলিম আইনে কোন নাবালক শিশুর সম্পত্তির তিন ধরনের অভিভাবক হতে পারে:
 ক. আইনগত অভিভাবক; খ. আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক; গ. কার্যত অভিভাবক
 
আইনগত অভিভাবক
আইনগত অভিভাবকরা হলেন- বাবা; বাবার ইচ্ছাপত্রে (উইল) উল্লেখিত ব্যক্তি; বাবার বাবা (দাদা); বাবার বাবার ইচ্ছাপত্রে (উইল) উল্লেখিত ব্যক্তি। উপরে উল্লেখিত আইনগত অভিভাবকগণ নিম্নলিখিত কারণে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি অথবা বন্ধক দিতে পারেন: ১। উক্ত সন্তানের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য তার অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি অথবা বন্ধক দিতে পারেন। ২। নাবালকের ভরণপোষণ, উইলের দাবী, ঋণ, ভূমিকর পরিশোধ ইত্যাদির জন্য একজন আইনগত অভিভাবক নিচের এক বা একাধিক কারণে স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করতে পারেন। ক. ক্রেতা দ্বিগুন দাম দিতে প্রস্তুত, খ. স্থাবর সম্পত্তিটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, গ. সম্পত্তিটি রক্ষণাবেক্ষণে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে।
 
আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক
যখন আইনগত অভিভাবক থাকেন না তখন আদালত নাবালকের সম্পত্তি দেখাশুনার জন্য অভিভাবক নিয়োগ করতে পারেন। এভাবে নিযুক্ত অভিভাবকরাই হলেন আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক। তবে এই অভিভাবক আদালতের অনুমতি ছাড়া কোন কারণেই সম্পত্তির কোন অংশ বিক্রি, বন্ধক, দান, বিনিময় বা অন্য কোন প্রকার হস্তান্তর করতে পারবে না।
 
কার্যত অভিভাবক
নাবালককে রক্ষার জন্য আইনগত অভিভাবক বা আদালত নিযুক্ত অভিভাবক না হয়েও যে কেউ নাবালকের অভিভাবক হিসেবে কাজ করতে পারেন। বাস্তবে এরকমভাবে যিনি অভিভাবক হিসেবে কাজ করেন তিনিই হলেন কার্যত অভিভাবক। তবে তিনি কোন অবস্থাতেই সম্পত্তির স্বত্ব, স্বার্থ বা অধিকার হস্তান্তর করতে পারবেন না।
 
হিন্দু আইনে অভিভাবকত্ব
হিন্দু আইনেও অভিভাবকত্বের কথা বলা হয়েছে। এই আইনে ৩ ধরনের অভিভাবক স্বীকৃত। ক. স্বাভাবিক অভিভাবক; খ. বাবা কর্তৃক উইল দ্বারা নিযুক্ত অভিভাবক; গ. গার্ডিয়ানস এন্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট ১৮৯০ অনুযায়ী আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক। এছাড়া ‘কার্যত অভিভাবক’ হিসেবেও অভিভাবক দেখা যায়।
বাবার অবর্তমানে মা নাবালকের শরীর ও সম্পত্তির আইনগত অভিভাবক কিন্তু বাবা যদি উইল করে অন্য কোন ব্যক্তিকে নাবালকের অভিভাবক নিযুক্ত করেন তাহলে মা অপেক্ষা সেই ব্যক্তির দাবী গণ্য হবে। বাবা মা কেউ না থাকলে প্রয়োজনে আদালত নাবালকের নিকবর্তী আত্মীয়দের মধ্য থেকে একজনকে নাবালকের অভিভাবক নিযুক্ত করতে পারেন।

প্রযুক্তিগত বোকামি ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত

  ইন্টারনেট ১৯৬৯ সালে আবিস্কৃত হয়। গত ১৯৯৫ সালে ইন্টারনেট বাণিজ্যিক বা কর্পোরেট পন্য হিসেবে আবির্ভূত হয়ে চলমান রয়েছে। গত ১৯৯০ দশকে টেলিফো...