বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি'র মাধ্যমে মামলা জট কমানো সম্ভব
আদালতের বাইরে "বিকল্প বিরোধ
নিষ্পত্তি" পদ্ধতি ব্যবহার করে আদালতে বিচারাধীন মামলার জট কমিয়ে আনা
সম্ভব। মামলা বা বিরোধ নিষ্পত্তির এ অনানুষ্ঠানিক বা উপানুষ্ঠানিক পদ্ধতি
ব্যবহার করে অনেক দেশই সুফল পেয়েছে।
কোনো কোনো দেশ মামলার পরিমাণ ৩/৪ মাসে আশানুরূপভাবে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
আমাদের
প্রাক্তন আইন মন্ত্রীও এরকম আশাই ব্যক্ত করেছিলেন। সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট
আইনও সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সে সুফল আমরা এখনো ভোগ করতে
পারিনি।
আনুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর লেগে
যায়। অনেক মামলাতেই বিচার যখন পাওয়া যায়, ন্যায়বিচারের তখন আর কোনো প্রয়োজন
বা প্রাসঙ্গিকতা থাকে না।
তাই, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির দিকে আমাদের
বেশি নজর দিতে হবে। তবে, এক্ষেত্রে আইনজীবী ও বিচারের ভূমিকাই
গুরুত্বপূর্ণ। মূলত বিচারককে এসব মামলায় সমঝোতাকারীর ভূমিকা পালন করতে হয়।
বিচারকদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও আইনজীবীদের সহযোগিতা ছাড়া বিকল্প বিরোধ
নিষ্পত্তি সম্ভব না।
মামলার ভারে জর্জরিত আদালতের কার্যতালিকায়
প্রতিদিনই জমা হচ্ছে আরো নতুন নতুন মামলা। প্রতিদিনই বেড়ে চলছে মামলার
সংখ্যা। আমাদের আনুষ্ঠানিক আদালত বা বিচার ব্যবস্থার পক্ষে সময়মতো
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে বিচার সম্পন্ন করা দুরুহ।
কেবল নিম্ন আদালতই না, উচ্চ আদালতেও জমা হচ্ছে অসংখ্যা মামলা।
এ উদ্দেশেই বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিষয়ক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
বিদ্যমান মামলা জট খুলতে হলে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির দারস্ত হতেই হবে।
শুধু
তাই নয়, আমাদের আদালতগুলোর যে জনবল কাঠামো, অবকাঠামো ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক
সুবিধা প্রয়োজন তা নেই। ফলে বিকল্প হিসেবেই এর সুবিধা নিতে হবে। জনবলের
সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করার সাথে সাথে বিদ্যমান দুর্নীতিও হ্রাস করার
ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা।
দুশো
বছরের ঔপনিবেশিক শাসন ও দুই যুগের পাকিস্তানি শাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে
আমরা পেয়েছি আমাদের বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থা। কোনো ক্ষেত্রে সে ব্যবস্থা
থেকে আমরা এখনো মুক্ত হতে পারিনি। ফলে, অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো বিচার
ব্যবস্থায়ও বিরাজ করছে দীর্ঘসূত্রিতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।
কোনো
কোনো দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তি হতে ১৫-২০ বছর বা তারও বেশি সময় লাগে। এসব
মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু
কিছু আইনজীবী ও বিদ্যমান ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্টরা এসব মামলা জিয়িয়ে
রাখার জন্য চেষ্টা করেন। মানুষ মরে যায়, অথব দেওয়ানি মামলা চলে কয়েক পুরুষ
ধরে। এব্যবস্থা থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দিতেই বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি
আইন।
বিচার প্রার্থিরা বিচারের আশায় লাখ লাখ খরচ করে, কিন্তু
তারপরও কাঙ্ক্ষিত বিচার তারা পায়না। দিনের পর দিন সময় প্রার্থনা নামে
সুপরিকল্পিতভাব ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করা হয়।
যদিও আমাদদের দেশে
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বাধ্যতামূলক না। এটি আদালতের বা পক্ষদের একটি
ইচ্ছাধীন বিষয়। উন্নত দেশেগুলোতে অনেক মামলার বিরোধ নিষ্পত্তি হয়ে থাকে
বিকল্প পদ্ধতিতে।
অনেক ক্ষেত্রেই আইনজীবীরা বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহায়তা
করেন না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি উৎসাহিত করতে আইন
পরিবর্তন করা হলেও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা সহযোগিতা না করার ফলে মামলার পক্ষরা
এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিচারকেরও সংকট আছে
এক্ষেত্রে। জনবল সংকটতো আছে। তাই অনেক গবেষক, অবসর প্রাপ্ত বিচারকদের এ
কাজে নিয়োগের কথাও বরছেন।
তাছাড়া বিচারকে মানুষের দোরগোড়ায় নিতে
গ্রাম আদালতকে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিতে হবে। অল্পকিছু ইউনিয়নে এ আদালত চলছে।
তবে তাও পুরোপুরি কার্যকর না। দেশের সব ইউনিয়নে পর্যায়ক্রমে গ্রাম আদালতকে
প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি হলে যে কেবল মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়বে তাই নয়, ন্যায়বিচারও সহজলভ্য হবে।
তাই,
জনগণের কাছে ন্যায়বিচার পৌঁছে দিতে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বিকল্প বিরোধ
নিষ্পত্তি ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। তাই এ লক্ষ্যে আইনের প্রয়োগ ও
আইনজীবী, বিচারক তথা বিচারকাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে
এগিয়ে আসতে হবে।