Wednesday, 2 September 2015

তালাক কখন, কিভাবে?

তালাক কখন, কিভাবে?

বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে মুসলিম আইনে বলা হয়েছে, যেকোনো সুস্থমনা ও সাবালক যেকোনো সময় তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন। পাশাপাশি কাবিনামায় যদি স্ত্রীর তালাক দেওয়ার ক্ষমতা অপূর্ণ থাকে, তবু স্ত্রী স্বেচ্ছায় স্বামীকে তালাক প্রদানে সক্ষম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলিম আইনে তালাক মূলত মৌখিক বা লিখিত আকারে হতে পারে। তবে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন দ্বারা মৌখিক তালাককে অকার্যকর করা হয়েছে। কাবিনামার ১৮ নম্বর কলামে স্বামী তাঁর স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অধিকার প্রদান করতে পারেন। এ ক্ষমতা শর্তযুক্ত কিংবা শর্তহীন হতে পারে।
স্বামী যদি নিম্নের এক বা একাধিক অথবা সব শর্ত লঙ্ঘন করেন, তাহলে স্ত্রী তালাকের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।

১. স্বামী সম্মানজনক জীবন যাপন করে অর্থ উপার্জন করবেন এবং স্ত্রীর ভরণপোষনের ভার নেবেন। স্ত্রীর অনুমোদিত বাড়িতে বসবাস করবেন।
২. স্ত্রীর ওপর স্বামী অন্যায়ভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করবেন না।
৩. স্ত্রীকে স্বামী বছরে অন্তত চারবার পিত্রালয়ে যেতে দেবেন এবং খরচ প্রদান করবেন।
৪. স্ত্রী বন্ধ্যা বা অসুস্থ না হলে স্বামীর তাঁর অনুমতি ব্যতিত দ্বিতীয় বিয়ে করার চুক্তি করবেন না।
৫. চাওয়ামাত্র স্ত্রীকে তাৎক্ষনিক দেনমোহর প্রদান করবেন।


আদালতে ডিক্রিমূলেও স্ত্রী তালাক নিতে পারেন। মূলত বিয়ের কাবিননামায় স্ত্রীকে তালাকের কোনো ক্ষমতা অর্পন করা না হলে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন হয়। ১৯৩৯ সালের বিবাহবিচ্ছেদ আইনে স্ত্রীকে এ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এই আইনের ধারা অনুযায়ী, স্ত্রী যেসব কারনে বিবাহবিচ্ছেদের দাবি করে আদালতের ডিক্রি লাভের আবেদন করতে পারেন, সেগুলো হলো :
১. চারবছর স্বামী নিরুদ্দেশ থাকলে।
২. স্বামী দুই বছর ভরণপোষন দিতে অবহেলা করলে (২-ক) স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের বিধান লঙ্ঘন করে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করলে।
৩. স্বামী সাত বছর বা ততোধিক কালের জন্য কারাদন্ডে দন্ডিত হলে।
৪. স্বামী যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া তিন বছর বৈবাহিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে।  
৫. স্বামী পুরুষত্বহীন থাকলে।
৬. স্বামী দুই বছর অপ্রকৃতিস্থ, কুষ্ঠরোগ বা মারাতœক যৌনব্যাধিতে ভুগলে।
৭. নাবালিকা অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ে হয়ে থাকলে সাবালিকা (১৮ বছর পূর্ণ) হওয়ার পর স্ত্রী যদি তা অস্বীকার করেন। এতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন হলে মোকদ্দমা করা যাবে না।
৮. স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী নিষ্ঠুর আচরণ করলে। যেমন, ক, অভ্যাসগত স্ত্রীকে মারধর বা আচরনের নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে স্ত্রীর জীবন  দুর্বিষহ করে তুললে; খ. অন্য নারীর সঙ্গে স্বামী মেলামেশা করলে; গ. নৈতিকতাবিরোধী জীবনযাপনের জন্য স্ত্রীকে বাধ্য করার চেষ্টা করা হলে; ঘ. স্ত্রীর সম্পত্তি হস্তান্তর করে দিলে বা সম্পত্তিতে বৈধ অধিকার প্রয়োগ থেকে তাঁকে নিবারণ করলে; ঙ. স্ত্রীর ধর্মীয় চর্চায় বাধা প্রদান করলে; চ. স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকলে পবিত্র কোরআনের বিধান অনুযায়ী ন্যায়সংগত ব্যবস্থা না নিলে।
৯. মুসলিম আইনে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য বৈধ বলে স্বীকৃত অন্য যেকোন কারণে স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদের দাবি করতে পারেন।

তবে বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এবং বিধানাবলি অনুসরণ না করলে তালাক অকার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তালাকের নোটিশ দেওয়ার পদ্ধতি
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭(১) ধারা অনুযায়ী যেভাবেই বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক ঘটুক না কেন, যে পক্ষ তালাক দিতে চাইবে সে পক্ষ অপর পক্ষের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মিউনিসিপ্যালিটির বা সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যানের/মেয়রের কাছে নোটিশ লিখিতভাবে পাঠাবে এবং ওই নোটিশের কপি অতিসত্বর অপর পক্ষের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা নেবে। আদালতের মাধ্যমে কোনো বিবাহ ভঙ্গ মামলার ডিক্রি হলে সে ডিক্রির কপি চেয়ারম্যানকে প্রদান করলেই ৭ ধারার নোটিশ দেওয়ার বিধান প্রতিপালিত হবে।

যে পক্ষ থেকেই তালাকের নোটিশ দেওয়া হোক না কেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে উভয় পক্ষের মনোনীত প্রতিনিধি নিয়ে সালিসি পরিষদ গঠন করবেন। আপোসের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, তা লিপিবদ্ধ করবেন। আপসের চেষ্টা সফল হলে তালাকের নোটিশের কোনো কার্যকারিতা থাকবে না এবং তাঁদের পুনরায় বিয়েরও কোনো প্রয়োজন হবে না।

তালাকের নোটিশ না দেওয়ার সাজা
তালাকের ক্ষেত্রে বর্তমান আইনে প্রদত্ত নিয়ম পালন না করলে এক বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড কিংবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।

তালাকের কার্যকারিতা
চেয়ারম্যানের হাতে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। অর্থাৎ নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসির কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। তবে স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে গর্ভকাল শেষ হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে।

খোলা তালাক
মুসলিম আইনে স্ত্রীর ইচ্ছায় বিবাহবিচ্ছেদের আরেকটি ব্যবস্থা হচ্ছে খোলা তালাক। এ তালাক এমন এক ধরনের তালাক, যা স্বামী-স্ত্রীর সম্মতিতে স্ত্রীর ইচ্ছায় কার্যকর হয়। খোলা তালাক পারস্পরিক চুক্তি দ্বারা অথবা কাজি বা আদালতের নির্দেশে হতে পারে। এ তালাকের উল্লেখযোগ্য দিক হলো:
১. স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে থাকেন
২. স্বামী ওই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে থাকেন
৩. স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সময় স্বামী বিনিময়ে স্ত্রীর কাছ থেকে প্রতিদান নিয়ে থাকেন এবং স্ত্রী তা দিয়ে থাকেন বা দিতে সম্মত থাকেন।
তবে খোলা তালাকের ক্ষেত্রে অন্য কোনো চুক্তি না থাকলে স্ত্রী মোহরানা পাওয়ার অধিকারী হবেন না; কিন্তু ইদ্দত পালনকালে স্ত্রী তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের জন্য স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষন পাওয়ার অধিকারী হবেন।

তালাক-পরবর্তী মোহরানা ও ভরণপোষন
মুসলিম আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, তালাকের পর স্ত্রী অবশ্যই দেনমোহর ও ভরণপোষন পাওয়ার অধিকারী হবেন। কিন্তু অনেকেই বলেন স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় তালাক দেন তাহলে দেনমোহর ও ভরণপোষন থেকে বঞ্চিত হবেন। এটা পুরোপুরি ভুল ধারনা। দোনমোহরের ক্ষেত্রে বলা যায়, দোনমোহর বিয়ের শর্ত, তালাকের সঙ্গে এর সম্পর্কে নেই; তাই তালাক প্রদান করা হলেও স্ত্রী দেনমোহর পাবেন। তবে স্ত্রী যদি নিজ ইচ্ছায় কোনো কিছুর প্রতিদানে স্বামীর মাধ্যমে তালাক নিয়ে নিজেকে বিবাহবন্ধন থেকে মুক্ত করে (খোলা তালাক) থাকেন, কেবল সে ক্ষেত্রেই স্ত্রী দেনমোহর পাবেন না। স্ত্রীর মৃত্যু হলেও তাঁর উত্তরাধিকারীরা এটি পাওয়ার অধিকারী। তবে মোহরানা দাবির তিন বছরের মথ্যে মামলা না করলে মোহরানা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়। ভরণপোষনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, তালাকের পর ইদ্দতকালে স্ত্রী ভরণপোষন পাওয়ার অধিকারী। ইদ্দত শেষ না হওয়া পর্যন্ত যদি তালাকের বিষয়ে তাঁকে অবহিত করা না হয়, তবে সে পর্যন্ত তিনি ভরণপোষন পাওয়ার অধিকারী হবেন।

প্রযুক্তিগত বোকামি ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত

  ইন্টারনেট ১৯৬৯ সালে আবিস্কৃত হয়। গত ১৯৯৫ সালে ইন্টারনেট বাণিজ্যিক বা কর্পোরেট পন্য হিসেবে আবির্ভূত হয়ে চলমান রয়েছে। গত ১৯৯০ দশকে টেলিফো...